Header Ads Widget

Responsive Advertisement

দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষ আর সেখান থেকেই শুরু এক অন্যরকম পথচলার গল্প



পিয়ালী দাস : 
রেলকর্মী হিসেবে দীর্ঘজীবন কাজ করার পর অবসর নিয়েছেন এই এক বছর আগে। করোনা তখনও ভারতে সেভাবে প্রভাব ফেলেনি। সময়টা জানুয়ারি। ছোটবেলা থেকেই ছিল বেড়াতে যাওয়ার স্বপ্ন। সারা পৃথিবী না হোক, অন্তত দেশটা দেখা চাই। 



কাজের মাঝেই তাই বেরিয়ে যাওয়া এধার-ওধার ভারতের নানান জায়গায়। হাতে ক্যামেরা, সঙ্গী পরিবার। আর অবসর নেওয়ার আগেই শুরু হয়েছিল আর একটা নতুন স্বপ্নের যাত্রা। একটা ইউটিউব চ্যানেলের। দীর্ঘ চাকরির পর অবসর জীবনে তার বাকি বন্ধুরা যখন ঝিমিয়ে পড়েছে ঠিক তখনই সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় ভিডিও এডিটিং শিখে নিয়ে শুরু হল ইউটিউব চ্যানেল। 





কার্যত কারো সাহায্য ছাড়া ফেসবুক পেজ বা ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট ছাড়া এই ভিডিও বানানো শুরু এবং অচিরেই কিছু ভিডিও দেড় লাখের কাছাকাছি ভিউ। সেদিন এক অদ্ভুত আনন্দ দিয়েছিল। জিতে যাওয়ার আনন্দ। অলোক মিত্র, বয়স ৬২ ছুঁই ছুঁই। তবুও এখনও একাই বেরিয়ে পড়েন ট্রেকিংয়ে। সঙ্গে কিছু নতুন ছেলে যাদের নিজের হাতে শেখান ছবি তোলা, রুট প্ল্যান, ট্যুর ম্যানেজমেন্ট। 





এইভাবে নতুন দল তৈরি হয়, আবার ভেঙ্গেও যায়। কিন্তু নিজে ভেঙে পড়লে চলবে না। এখন পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মতো ভারতেও বার্ধক্য বিদ্যা বা Gerontology নিয়ে ভাবনা শুরু হয়েছে। দীর্ঘ চাকরি জীবনের পর আসে নিরবচ্ছিন্ন সময়। অবসর। তখন সন্তানেরাও নিজেদের জীবন বেছে নিয়েছে। তাদের সময় কোথায়? হয়তো স্ত্রী তখনও চাকুরিরতা। কাজেই এই সময়ে তৈরি হয় ডিপ্রেশন।




কি করা যায় বা কি করা উচিত সেই ভাবতে ভাবতেই পেরিয়ে যায় বেশ কিছু বছর। তখন নতুন কিছু করার ক্ষমতা এবং শক্তি দুটোই তলানীতে। অলোক তাই দু'বছর আগে থেকেই শুরু করেছিলেন ভাবনা। প্রথম বাচ্চাদের জন্য গল্পপাঠ কিংবা রবিবারের গল্প নাম দিয়ে ছোট ছোট কিছু ভিডিও তৈরি করলেও আসল উদ্দেশ্য ছিল ট্র্যাভেলগ তৈরি করার। আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে শুরু হয় অলোক মিত্র ইউটিউব চ্যানেল। তার কথায় আমি যে ট্র্যাভেলগ তৈরি করি তাতে যথাসম্ভব তথ্য দিই। 





এমনভাবেই ভিডিও প্ল্যান করি যাতে ওটাই একটা গাইডবুক হিসেবে কাজ করে। তাজপুর, দেউটি, বাওয়ালি ফার্ম হাউস, জয়পুর জঙ্গল, পঞ্চকোট পাহাড়, পাখি পাহাড়, মার্বেল লেক, মেঘালয়, ডাবল ডেকার লিভিং রুট ব্রিজ এসব নানান ভিডিও দর্শক দেখেছেন। অলোকের কথায়, করোনার জন্য খুব দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে পারছিনা। 





তাই আপাতত পশ্চিমবাংলার মধ্যেই ছোট ছোট জায়গায় যাচ্ছি, ছবি তুলে আনছি। আমার মনে হয় যারা বেড়াতে ভালোবাসেন কিন্তু করোনার জন্য প্ল্যান করতে পারছেন না তাদের জন্য এই জায়গাগুলি আকর্ষণীয় তিন-চার দিনের ট্যুর প্ল্যান হতেই পারে। প্রতি সপ্তাহে একটি বা দুটি করে ভিডিও আপলোড করার চেষ্টা করি। আমি ওয়ান ম্যান আর্মি। সবটাই আমাকে একা হাতে করতে হয়। তাই সময় লাগে। 





বর্তমান সময় যখন ইউটিউব শাসন করছে তরুণ প্রজন্ম, সেই সময় টেকনলজি বিমুখ বয়স্ক মানুষদের মধ্যে থেকে উঠে এসেছেন অলোক মিত্র। নিজে নিজেই শিখে ফেলেছেন সোশ্যাল মিডিয়ার কারিকুরি। প্রতিনিয়ত শিখে চলেছেন উন্নত টেকনোলজিক্যাল স্কিল। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর নিজের পছন্দ এবং শখগুলিকে নিয়েও যে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা শিখিয়ে চলেছেন তারই সমবয়সী মানুষদের।

Post a Comment

0 Comments